#এলভিস_প্রিসলি , এই ব্যক্তিকে কে না চিনে! রক এন্ড রোলের জনক। জীবদ্দশায় খ্যাতি, অর্থ, বিত্তের একেবারে শীর্ষে পৌঁছে গিয়েছিলেন। মাত্র ৩১ বছর বয়সে বাজারে যার নামে ৭১টি ব্রান্ড চালু ছিল, পৃথিবীর প্রথম শিল্পী হিসাবে যিনি প্রাইভেট জেটে ঘুরে বেড়াতেন, তিনি যে লিমোজিনে চড়তেন তাতে ডায়মন্ডের পাত বসানো ছিল, ৫০০ মিলিয়ন রেকর্ড বিক্রির রেকর্ড যার নামের পাশে, কনসার্টের সময় নিজের জ্যাকেট দর্শকদের উদ্দ্যেশে ছুঁড়ে দিলে মুহুর্তেই সেটা নিয়ে কাড়াকাড়ি শুরু হয়ে যেত॥ সেই এলভিস প্রিসলি একদিন সকালে যখন নিজ ঘরে বসে টিউন করছিলেন তখন তার সেক্রেটারি এসে জিজ্ঞেস করলেন, 'খ্যাতির এমন তুঙ্গে থাকা অবস্থায় জীবনটাকে কেমন অনুভব করছেন?' এলভিস প্রিসলি গিটারে টিউন বন্ধ করে জবাব দিলেন, “একা। ভীষণ একা। দুপুরের খাঁখাঁ রোদে আকাশে উড়তে থাকা চিলের মতো একা।” হাজার হাজার মানুষ যার কনসার্টের জন্য বছর ধরে অপেক্ষা করে, যার হাতের একটু স্পর্শে ভক্তরা পাগল হয়ে যায়, সেই এলভিস প্রিসলি বলছেন- তিনি একা। খুবই একা। ভীষণ একা! এই একাকিত্বের যন্ত্রণা থেকে মুক্তি পেতেই একসময় তিনি মাদকের দিকে ঝুঁকে পড়লেন কিনা কে জানে? মাত্র ৪২ বছর বয়সে প্রিসলির এমন করুণ মৃত্যুর জন্য দায়ী একাকিত্ব, অতিরিক্ত মাদক আর ডাক্তারের ভুল ওষুধ। লক্ষ ডলারের বিছানায় শুয়ে মাইকেল জ্যাকসনেরও ঠিকমতো ঘুম হতো না। তিনিও একা। দশটি পিল খেয়েও দুই ঘন্টার বেশি ঘুমাতে পারতেন না। লাখো ভক্ত থাকার পরেও বলতে গেলে মৃত্যুর কাছেই জীবন একপ্রকার সঁপে দিলেন। একাডেমিক এ্যাওয়ার্ড পাওয়া রবিন উইলিয়ামসও সেই একই পথের যাত্রী। সারা জীবন মানুষকে অনুপ্রেরণার গল্প শুনিয়ে হেরে গেলেন ডেল কার্নেগি। পৃথিবীতে যে কয়জন মানুষের নামের আগে গ্রেট বসানো হয়, তাদের একজন হলেন, নেপোলিয়ান বোনাপার্ট। নেপোলিয়ান বোনাপার্ট বলেন- “পুরো পৃথিবীকেই হয়তো পায়ের নিচে রাখতে পারি। কিন্তু জীবনে এমনি দূর্ভাগ্য মাত্র সাতটি দিনও এই জীবনে শান্তিতে কাটাতে পারিনি! ক্ষমতা বেড়েছে, খ্যাতি বেড়েছে। শুধু জীবনে শান্তিটুকু বাড়েনি।” এরকম কত শত উদাহরণ যে আছে। ভালো টাকা ভালো বিছানা দেয়; কিন্তু ভালো ঘুম তো দেয় না। স্বাস্থ্য বীমা দেয়; কিন্তু সুস্বাস্থ্য তো দেয় না। ভালো খাবার দেয়; কিন্তু হজমশক্তি তো আর দেয় না। পৃথিবী বিখ্যাত এইসব সফল ব্যক্তিদের কিসের অভাব ছিল? আকর্ষণীয় বাড়ি, দামী গাড়ি কিংবা খ্যাতি, কোনো কিছুর কী কমতি ছিল তাদের? না, ছিল না। শুধু একটা জিনিসেরই কমতি ছিল, সেটা হলো শান্তি। মানুষ যখন হাতে কাজ করে সেটাকে বলে লেবার। হাতের সাথে যখন মাথা যুক্ত হয় সেটাকে বলে স্কিল। হাত আর মাথার সাথে যখন হার্ট যুক্ত হয় তখন সেটা হয়ে যায় আর্ট। আর আর্টের সাথে যখন স্পিরিচুয়ালিটি যোগ হয়, তখনই মানুষের জীবনে আসে আসল শান্তি। এই স্পিরিচুয়ালিটি বা আধ্যাত্মিকতাই আমাদেরকে নিয়ে যায় স্রষ্ঠার কাছে, আরো কাছে। তখন আমরা বুঝতে পারি জীবনে শুধু চাই চাই করতে নেই। কারণ জীবনে সব পাওয়া হয়ে গেলে তখন আর বেঁচে থাকার ইচ্ছেটাই থাকে না। এজন্যই একজন রিকশাওয়ালা দিনে ৩০০ টাকা আয় করেও রাতে শান্তিতে ঘুমায়, আর ধনকুবেরেরা ব্যাংকে ৩০০ কোটি টাকা জমা থাকার পরেও দুচোখের পাতা এক করতে পারে না। কি নিদারুন বৈপরীত্য, তাইনা?
Show more